আমিরুল ইসলাম, সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি: জন্মের পর থেকে ভিটে মাটিহীন গোলজার-রোকেয়া দম্পতি অন্যের বাসায় ভাড়া থেকে গোলজার হোসেন মাছের ব্যবসা করে জীবিকা নির্বাহ করতো। এক সময় তাদের ঘরে আসে দুটি ছেলে এবং দুটি মেয়ে । আশায় বুক বাঁধে গোলজার-রোকেয়া দম্পতি। হয়তো ছেলেরা একদিন বড় হয়ে আয় রোজগার করে এক টুকরো থাকার জায়গার ব্যবস্থা করবে। হয়তো তাদের স্বপ্ন একদিন পূর্ণ করবে। কিন্তু সে আসায় গুড়েবালি। তার স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে যায়। কিন্তু সেই স্বপ্ন পূরণ হয় আশ্রয়ন প্রকল্পের ঘর পেয়ে।
সরকারের দেয়া ২শতক জায়গাসহ পাকা ঘর পাওয়ার স্বপ্ন পূরণ হলেও বয়সের ভারে বার্ধ্যকের ছাপ পড়ে গেছে দেহে। গোলজার-রোকেয়া দম্পতি প্রায় একমাস ধরে ঘর পেলেও ঘরে উঠার পরের দিন থেকেই গোলজার হোসেন অসুস্থ বিছানায় পড়ে রয়েছেন। শ্বাসকষ্ট ও শরীরের দুর্বলতা তাকে নির্বিকার করে ফেলেছে। একদিকে বয়সের ছাপ অন্যদিকে রয়েছে অসুস্থতা সীমাহীন দুর্ভোগে রয়েছেন তিনি। অসুস্থতার প্রকট এতটাই বেশি যে উঠে বসতে পর্যন্ত পারেন না। ভালো চিকিৎসা হওয়াতো দুরের কথা অভাবের তাড়নায় না খেয়ে দিন পার করছেন তারা। অসুস্থতা এবং অভাব এতটাই বেশি যে দিনে দিনে শয্যাশায়ী গোলজার হোসেন মৃত্যুর প্রহর গুনছেন। অসুস্থ স্বামীকে নিয়ে রোকেয়া বেগম দিশেহারা হয়ে পড়েছেন দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন স্বামীর জন্য চিকিৎসা বা খাবারের সহায়তার জন্য । অন্যদিকে ছেলে বা মেয়ে কেহই তাদের সাথে যোগাযোগ রাখার প্রয়োজন বোধ করছেন না । এ যেন ভিন্ন এক পৃথিবীতে বাস করছেন গোলজার-রকেয়া দম্পতি স্বামীকে নিয়ে বড়ই কষ্টের দিন পার করছেন তিনি। সারাদিনে আশেপাশের কেউ কিছু দিলে খায় না দিলে না খায়। কেন এমন অবস্থায় সকলের সহযোগিতা চেয়েছেন গোলজার-রোকেয়া দম্পতি।
পাশের ঘরে থাকা জাবেদা খাতুন জানান, এনারা এখানে আসার পরদিন থেকেই অসুস্থ দেখার কেউ নেই মুরুব্বীও কাজে যেতে পারেন না। অসুস্থ অবস্থায় পড়ে রয়েছেন টাকার অভাবে চিকিৎসাও নিতে পারছেন না। ছেলে মেয়েরাও কোনো খোঁজখবর নিতে আসে না । খুবই কষ্টে রয়েছেন তারা। কেউ সাহায্য না করলে তাদের অবস্থা আরো খারাপ হবে।
উপজেলা পিআইবি অফিসের তথ্য মতে, সারাদেশের ন্যায় কামারখন্দ উপজেলাতে মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী দেয়া উপহার হিসেবে মোট ঘরের সংখ্যা ২৮৫টি। যেটা ১ম,২য়,৩য়,৪থ ধাপে বাস্তবায়ন করা হয়। সর্বশেষ প্রধানমন্ত্রীর গৃহহীন, ভূমিহীনদের জন্য দেয়া গত ৯ আগস্টে চতুর্থ ধাপের আশ্রয়ন প্রকল্পের ১০৭ টা ঘর গৃহহীন ও ভূমিহীনদের মাঝে দেয়া হয়। যেখানে উপজেলার জামতৈল ইউনিয়নের নান্দিনামধু গ্রামের বকচরাক বিলের মাঝে একসঙ্গে মোট ১২২টি ঘর রয়েছে। সেই আশ্রয়ন প্রকল্পের আওতায় উপহারের এতগুলো ঘর একসাথে থাকায় এলাকাটির নামকরণ করা হয়েছে মধুগ্রাম । সেই মধুগ্রামের ২১২ নম্বর ঘরটিতে বসবাস করেন গোলজার-রোকেয়া দম্পতি।
বিষয়টি নিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহিন সুলতানা বলেন, আমি দ্রুতই ঐখানে যাবো এবং এই বৃদ্ধ দম্পতির বিষয়ে খোঁজ খবর নিয়ে তাদের জন্য যতটুকু সম্ভব চেষ্টা করবো কিছু করার জন্য।